শিশুর মানসিক বিকাশে কোলাবরেটিভ খেলাঃ খেলা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ছোট বয়সে কিছু শিখানোর জন্য খেলা একটা অন্যতম মাধ্যম। নতুন কিছু শিখার জন্য এটা একসাথে মজা এবং লার্নিং দেয়। শিশুরা খেলার মাধ্যমেই শিখে। খেলা শিশুদের ইমোশনাল, সোশ্যাল, ফিজিক্যাল, নতুন কিছু শেখার দক্ষতা উন্নত করতে সহায়তা করে। তবে, সব শিশু একি ধরণের খেলা পছন্দ করে না এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে তাদের ব্যক্তিত্ব ও সঙ্গী ও পরিবেশ অনুযায়ী তারা ভিন্ন ভিন্ন ধরণের খেলা সিলেক্ট করে থাকে।
অভিভাবকগণ যদিও খেলা নিয়ে বিরক্ত থাকেন তারপরেও জেনে রাখা ভাল যে, সকল খেলারই অনেকগুলো উপকারী দিকও রয়েছে। আজকে এই লেখায় আমরা আলোচনা করবো (কোলাবরেটিভ) সমন্বিত খেলার প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা সম্পর্কে।
কোলাবরেটিভ খেলা, একে আবার অন্য নামে অনেকে সামাজিক খেলা ও বলে। এই ধরণের খেলা সাধারণত বাচ্চাদের ২ বছর বয়স থেকে আরম্ভ হয়। এই সময়ে তারা খেলার সাথীর সাথে ছুটাছুটি করা, খেলনা শেয়ার করা, এবং খেলার রুলস মনে রাখা শিখে যায়।
এখন কোলাবরেটিভ খেলা টা আসলে কি?
যখন বাচ্চারা একা কোন খেলনা দিয়ে না খেলে অনেক বাচ্চার সাথে অথবা ২-৩ জন বাচ্চা মিলে একসাথে খেলা করে তাই হল কোলাবরেটিভ খেলা বা সামাজিক খেলা। বাচ্চাদের মানসিক বিকাশে এই খেলার কতগুলো উপকারী দিক আছে। এটা বাচ্চাদের সোশ্যাল স্কিল, প্রবলেম সলভিং স্কিল ডেভেলপ করতে হেল্প করে,
এই ধরণের খেলায় বাচ্চার কোন একটা সমস্যা সমাধানের জন্য সবাই মিলে একসাথে কাজ করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোলাবরেটিভ খেলা কোনগুলো –
# বিস্কিট দৌড়, মনে আছে আমরা স্কুলে ছোট বেলায় কত খেলেছি?
# ১০-১৫ টা বেলুন ফুলিয়ে বাচ্চাদের সামনে উড়িয়ে দিন। রুমের এক কোনায় একটা টেবিল ফ্যান চালিয়ে দিন। এতে করে বেলুন উড়বে। বাচ্চারা ছুটোছুটি করে বেলুন ফাটাবে।
# মিউজিক্যাল চেয়ার। এটা এমন একটি খেলা যা কখনোই পুরাতন হয় না। সব বয়সের মানুষজন ই খেলতে পারেন।
# বাবল র্যাপ রেস। বাবল র্যাপের শিটের উপর দিয়ে বাচ্চারা দৌড়াবে।
আজকে আমরা এই সামাজিক খেলা কিভাবে আপনার সন্তানের মানসিক বিকাশে হেল্প করে তাই শেয়ার করব।
১। বাচ্চারা একসাথে খেলে বলে তাদের কথা বলা এবং শোনার দক্ষতা উন্নত হয়। তারা একে অন্যের সাথে সহজে কথা বলতে পারে, যোগাযোগ করতে পারে।
২। একসাথে খেলার সময় সবাই আইডিয়া শেয়ার করে এবং কি করতে হবে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়। সবাই মিলে ডিসকাস করে যখন আইডিয়া বের করে এতে তাদের ব্রেইনস্টর্মিং করা, নতুন নতুন আইডিয়া বের করার চিন্তা করার শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৩। একসাথে খেলার মাধ্যমে শিশুরা শেয়ারিং শিখে ফেলে। এই ধরণের খেলায় এক জন আরেকজনের সাথে খেলনা শেয়ার করতে হয়, যার মাধ্যমে ফ্রেন্ড অথবা ফ্যামিলির সাথে খেলে। প্রথমে হয়তো তাদের একটু মন খারাপ হয় তবে তারা দ্রুতই বুঝে ফেলে যে আমি আমার খেলনা টা অন্য কাউকে দিলে তার খেলনা ও আমি পাচ্ছি খেলার জন্য। শেয়ারিং এর গুরুত্ব টা তারা ছোট বেলায় ই বুঝে ফেলে যা পরবর্তীতে এই গুন টা তাদের জীবনে অনেক পজেটিভ ইমপ্যাক্ট নিয়ে আসে। বাবা মায়েরা এখানে হেল্প করতে পারে। প্রথম শেয়ারিং এর পর বাচ্চাদের অভিনন্দন জানাতে পারেন এবং কোন গিফট করতে পারেন। এতে বাচ্চারা আরও উৎসাহিত হবে।
৪। অন্য কে সম্মান দেখানো একটা বিশেষ গুণ, আর এটা ছোট বেলা থেকেই শেখানো উচিত। অন্যকে সম্মান দেয়া টা বাচ্চারা ছোটবেলায় শিখে ফেলে কোলাবরেটিভ খেলার মাধ্যমে। খেলার সময় রুলস ফলো করা রেসপেক্ট শিখানোর ভাল একটা উপায়।
কোলাবরেটিভ খেলার ক্ষেত্রে রুলস হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ একটা পার্ট। যারা খেলে তারা সবাই মিলেই রুলস বানায়, এবং সবাই মিলেই সেটা ফলো করে। রুলস ফলো করার মাধ্যমেই তারা একে অপরের প্রতি সম্মান দেখানো তা শিখে যায়।
এইক্ষেত্রে বড়রাও ভূমিকা রাখতে পারেন। তারা যখন বাচ্চাদের সাথে খেলবেন তারাও খেলার সকল রুলস মেনে খেলবেন। এতে আপনার শিশুর প্রতি সম্মান দেখানো টা সে বুঝতে পারবে।
৫। বাচ্চারা ফ্রেন্ডশিপ তৈরি এবং মেন্টেন করতে শিখে।
কোলাবরেটিভ প্লে ফ্রেন্ডশিপ করতে এবং তা মেন্টেন করতে শিখায়। জীবনে চলার পথে বন্ধুত্ব খুব দরকারি। বন্ধুর সাথেই শৈশবে খেলাধুলা দিয়ে শুরু হয়। একসাথে লাফালাফি করা, দৌড়ানো, একসাথে দড়ি নিয়ে টানাটানি, ফুটবল খেলা সব আমরা বন্ধুদের সাথেই করে থাকি।
ছোটবেলায়ই এই বন্ধুত্বের শিক্ষা বড় বেলায় ও অন্যান্য সম্পর্ক বজায় রাখতে হেল্প করে।
কোলাবরেটিভ প্লে বাচ্চাদের জন্য অনেক হেল্পফুল। শক্তিশালী মানসিকতা বিকাশের জন্য এটি একটি স্টারটিং পয়েন্ট।