বুস্ট করুন আপনার বাচ্চার ব্রেইন ঃ জন্মের সময় একটা শিশুর ব্রেইনে ১০০ বিলিয়ন নিউরন থাকে। প্রথম বছরের মধ্যেই বিলিয়ন থেকে ট্রিলিয়ন ব্রেইন সেল কানেকশন তৈরি হয়ে যায়। অনেক মজার তথ্য তাইনা? আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে একটি শিশুর ব্রেইনে একজন প্রাপ্ত বয়স্কের তুলনায় দিগুন নিউরাল কানেকশন থাকে।
তবে ব্রেইনের একটা কমন রুলস হল, হয় আপনি এটা কে ব্যবহার করবেন, নাহয় আপনি এটাকে হারাবেন।
যখন আপনি আপনার সন্তানের সাথে ভালোভাবে কথা বলবেন, সব কাজে উৎসাহ দিবেন, আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন তখন তার ব্রেইনের নিউরাল কানেকশন এবং পথগুলি একসাথে ওয়্যার হওয়ার আরও বেশি সুযোগ পায়।
এর ফলে সে অন্যান্য বাচ্চার তুলনায় অধিক বুদ্ধিমান, যে কোন জিনিস সহজে শিখার দক্ষতা অর্জন করে। আর সন্তানের ছোটবেলায় বাবা মায়ের এই ছোট ছোট কয়েকটি ইন্টারেক্টিভ কাজ তাকে অনেক বেশি ক্রিয়েটিভ এবং এক্সট্রা অর্ডিনারি করে গড়ে তোলে।
এখানে আজকে কিছু টিপস শেয়ার করব যা ইমপ্লিমেন্ট করে আপনারা সন্তানের ব্রেইন বুস্টিং এ হেল্প করতে পারেন।
বই পড়ে শোনান
বড় রং বেরঙয়ের ছবি ওয়ালা বই খুলে তাকে একটা একটা করে দেখান। আরও মজা পাওয়ার জন্য আপনি ঐ প্রাণীর ডাক মুখে শব্দ করুন। সপ্তাহ খানিকের মধ্যেই এক দিন চিড়িয়াখানায় যান, গিয়ে বাস্তবের সত্যিকার পশু পাখি দেখান। এতে করে আপনার সোনামণির বইয়ের দেখা পশুপাখি চিন্তা করতে পারবে, মনে করতে পারবে, ইমাজিনেশন পাওয়ার বৃদ্ধি পাবে।
সঠিক খেলনা বাছাই করুন
এমন খেলনা কিনে দিন যা বাচ্চাদের নতুন কিছু জানতে উৎসাহী করে তুলে। যেমনঃ মিউজিক্যাল টয়, ব্লক বিল্ডিং, এনিমেল / ভিহাইকেল পাজল, ম্যাগনেটিক চক বোর্ড, কালার্ড শেপ। উজ্জ্বল রঙের এই খেলনা দিয়ে
বিভিন্ন কালার, শেপ, এনিমেল সম্পর্কে জানতে পারবে।
বাচ্চা কান্না করলে দ্রুতই সাড়া দিন
শিশু কান্না করলে দ্রুত পাশে গিয়ে হাত ধরুন, জরিয়ে ধরুন। জরিয়ে ধরার ফলে সোনামণি গুরুত্ব পাচ্ছে এবং সুরক্ষিত আছে এই অনুভূতি পাবে। এটা ব্রেইনের লিম্বিক এরিয়ায় পজেটিভ ইমপ্যাক্ট তৈরি করে, যা আবেগের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
বডি ম্যাসাজ করুন
ম্যাসাজ সোনামণির স্ট্রেস রিলিফ করে এবং ভাল, ইমোশনাল সিকিউরড অনুভূতি দেয়। স্নেহের ছোঁয়া শিশুর গ্রোথ হরমোন বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রি-ম্যাচিউর বেবি যাদের দিনে ৩ বার ম্যাসাজ করা হয়েছে তারা অন্য বাচ্চাদের তুলনায় ( যাদের ম্যাসাজ করা হয়নি) দ্রুত হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়ার জন্য শারীরিক ভাবে প্রস্তুত হয়ে যায়।
নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করুন
হামাগুড়ি দেয়া শুধুমাত্র শারীরিক বিকাশের জন্যই নয়, মানসিক বিকাশের জন্য ও সমান দরকারি। চারপাশ নিরাপদ রাখুন যাতে হামাগুড়ি দেয়ার সময় সোনামণি কোন ব্যথা না পায়। হামাগুড়ি দিতে শিখার পর বাচ্চারা নিচে, উপরে, কাছে, দুরের পার্থক্য বুঝতে শিখে। এই সময় শিশু চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে ব্রেইনে একটা ম্যাপ কল্পনা করে নেয় যা তাদের আশেপাশের বস্তুর সাথে আরামদায়ক সম্পর্ক তৈরিতে সহায়তা করে।
গান করতে উৎসাহিত করুন
নার্সারি রাইম গুলো স্কুলের টিচারের জন্য না রেখে নিজেই বলতে উৎসাহিত করুন। গানে গানে আপনি বলুন, সোনামণিকে অনুকরণ করতে বলুন। প্রথম ২ দিন হয়তো আপনি একা একাই বললেন, দেখবেন ও তখন মনোযোগ দিয়ে শুনছে। তৃতীয় দিন আপনার সাথে সাথে আপনার সোনামণিও বলা শুরু করবে। এতে করে সাউন্ড এবং রিদমের সাথে সোনামণি কানেক্ট করবে, এবং ভাষাটাও ভালভাবে শিখে যাবে।
বিশ্বাস তৈরি করুন শিশুর প্রতি মনযোগী হোন
যখন শিশু খেলা করছে তখন ইন্সট্রাগ্রাম বা সোশ্যাল মিডিয়ায় নোটিফিকেশন চেক করার পরিবর্তে তার সাথে খেলা করুন, সঙ্গ দিন, বলে লাথি মেরে আপনি ও একটু এগিয়ে দিন। শিশু আপনার সাথে ইমোশনালি এটাচড ফিল করলে সে আরও অধিক আনন্দ নিয়ে খেলবে, নতুন জিনিস শিখবে, এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনে উৎসাহ পাবে।
বাচ্চাদের খেলনা গুছাতে দিন
ক্যাটাগরি শিখানোর জন্য এটা একটা মজার পদ্ধতি। বাচ্চাদের নানা রকম গাড়ি, প্রাণী, নানা রঙের অনেক রকম খেলনা থাকে। রাতে গুছানোর সময় এই কাজটা শিশুকে করতে দিন। তখন তারা বিভিন্ন খেলনার মধ্যে বড় ছোট আলাদা করা, ক্যাটাগরি করা শিখে যাবে।
মজায় মজায় খাওয়ান
বাচ্চা যখন যে খাবার খাবে তখন সে আইটেমের নাম জোরে জোরে বলতে বলুন। বাচ্চাকে নিজ হাতে খেতে উৎসাহিত করুন এবং গা যত ময়লাই করুক প্রথম বার মুখে দেওয়ার পর হাত তালি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করুন। এতে খাওয়ার সময় একটা মজার পরিবেশ তৈরি হবে এবং আপনার লিটল এঞ্জেল অনেক আনন্দ নিয়ে খাবে। তবে শুধু মাত্র খাওয়ার ক্ষেত্রেই না, সকল কাজের ক্ষেত্রেই হাততালি, গিফট এর মাধ্যমে বাচ্চাকে এপ্রিসিয়েট করুন। ১ সপ্তাহ পর নিজেই পরিবর্তন দেখতে পাবেন। বাচ্চা উৎসাহ নিয়ে অনেক নতুন নতুন জিনিস করার চেষ্টা করছে।
সোনামণির সাথে খেলা করুন
বাচ্চারা সহজ মজাদার গেম খেলতে পছন্দ করে। বাসায় আঙ্গুর খাচ্ছেন, এটাই ১ টা, ২ টা করে গুনুন। দেখবেন দেখাদেখি আপনার সোনামণি ও গুনা শুরু করেছে।