টিভি কমার্শিয়াল বা নাটকে আমরা প্রায়ই দেখি মা খাবার নিয়ে সন্তানের পিছন পিছন ছুটছে। এটা তো গেলো একটা মাত্র দৃশ্য। এরকম আরও অসংখ্য কাজ প্রতিদিন করে থাকেন একজন মা। দেখা যায় যে মায়ের দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৫-১৬ ঘন্টাই কাটে সন্তানের জন্য নানা কাজ করতে করতে। কি নেই এখানে?? সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করা থেকে শুরু করে, নাশতা খাওয়া, খেলাধুলা করা, গোসল করানো, খাবার খাওয়ানো, ড্রেস পরিয়ে দেয়া আরও কত কি। একবার ভাবুন তো এই সকল কাজ যদি আপনার সোনামণি করতে পারত তাহলে আপনি ফ্যামিলির অন্যান্য কাজে অথবা প্রফেশানাল লাইফে আরও কতটা সময় দিতে পারতেন!
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের দিকে যদি দেখি তাহলে আমরা এমনি দেখতে পারব। সেখানে ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের নানা লাইফ স্কিল শেখানো হয়।
বাচ্চার বয়স ২-৩ বছর হওয়ার পর থেকেই তাকে মজা করে নানা কাজ করতে দিন। এতে করে আস্তে আস্তে নিজে করতে শিখবে, এবং স্বনির্ভরও হয়ে যাবে। শার্ট টা নিজে পড়তে দিন, জুতার ফিতাটা বাঁধতে শেখান। এভাবেই দেখবেন শিখে যাবে সকল লাইফ স্কিল।
কোন কোন কাজগুলো বাচ্চাদের শেখানো উচিত তাই নিয়েই আজকের আর্টিকেলটি।
➦ খাবার খাওয়া
বাচ্চাদের খাওয়ানো আর যুদ্ধ জয় করা মনে হয় একই সমান। অধিকাংশ বাচ্চারাই খেতে চায়না। আবার বাবা মায়েরা ও এই ক্ষেত্রে ভুল ভেবে থাকেন। তারা ভাবেন ছোট শিশু আর স্বাদের কি বুঝবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের তুলনায় শিশুদের স্বাদ বোঝার ক্ষমতা তিন গুন থাকে। আপনার সোনামণিকে নিজের হাতে খাবার খাওয়া শেখাতে চাইলে রঙিন বিভিন্ন সবজি দিয়ে খাবার রান্না করুন। চেষ্টা করুন দিনে একবার পরিবারের সবাই মিলে একসাথে খাবার খেতে। বড়দের মতই শিশুর সামনে একটা প্লেট দিন। এতে করে খাবার হাতে নিয়ে মুখে দেয়ার প্রতি শিশুর আগ্রহ জন্মাবে। শিশু ঘরের খাবার স্বাদ এবং আনন্দ নিয়ে খেলে বাইরের জাঙ্ক ফুড চিপস, চকলেট এর প্রতিও আগ্রহ কম থাকবে।
➦ জিনিসপত্র গুছানো
গবেষণায় দেখা গেছে যেসব বাচ্চারা ছোটবেলায় ঘরের কাজে মাকে হেল্প করে তারা বড় হয়ে দায়িত্বশীল হয়ে থাকে। ছোটবেলার একটা ছোট্ট অভ্যাস সন্তানের বড়বেলায়ও প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। খাবার সময় শিশুর পানির পটটা ওকে নিজেই আনতে বলুন। বিকেলে কাপড় শুকানোর পর সোনামণির ড্রেস তার হাতে দিন রাখার জন্য। রাতে ঘুমানোর আগে সব খেলনা সোনামণিকে সাথে নিয়ে গুছান। প্রথম কয়েক দিন করার পর দেখবেন সোনামণি নিজেই একা একা গুছানো আরম্ভ করেছে। সবচেয়ে বড় কথা হল ওকে নিরন্তর উৎসাহ দিয়ে যান। হাততলি দিন, বাহবা দিন। দেখবেন খুশি মনে ও নিজের খেলনা গুছিয়ে তাকিয়ে আছে আপনার দিকে হাততালি পাবার আশায়। ওকে নিরাশ করবেন না। ও আপনাকে আশাতীত কিছুই ফিরিয়ে দিবে ফলশ্রুতিতে।
➦ টাকার ব্যাপারে ধারণা
জীবনে চলার পথে যেটি চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে তা হল টাকা। সব বাবা-মা ই অনেক কষ্ট করে টাকা উপার্জন করেন। এমনও দেখা যায় সন্তানের একটি ইচ্ছা পূরণের জন্য বাবা-মা নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসটি ও কেনেন না অনেক ক্ষেত্রে। তাই ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে টাকার ভ্যালু শেখান, মিতব্যয়ী হিসেবে বড় করুন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে করবেন? সন্তানের সাথে পড়িবারের আর্থিক ব্যাপারগুলো ছোট ছোট গল্প বলার মত করে শেয়ার করুন। সোনামণি খেলনা চাইলে তাঁকে সেটা নিজে কেনার কথা বলুন। সোনামণি স্বাভাবিক ভাবেই জানতে চাইবে আমি টাকা কোথায় পাব? তখন তাঁকে বলুন বারান্দায় গাছের টবে পানি দিলে প্রতিদিন ৫ টাকা করে পাবে, খেলনা গুছিয়ে রাখলে ২ টাকা করে পাবে। এতে করে টাকা উপার্জনের কষ্ট ও টাকার ভ্যালু বুঝতে শিখবে। এবার প্রতিদিনের টাকা ব্যাংকে সঞ্চয় করতে উৎসাহিত করুন। তবে তাড়াহুড়ো না করে আস্তে ধীরে এগোবেন এসব ক্ষেত্রে। এতে করে আপনি দীর্ঘস্থায়ী ফল পাবেন আপনার শিশুর কাছ থেকে।
➦ ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে বলুন
আপনার সন্তানকে কি দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চান? তাহলে তাঁকে বোঝান যে ময়লা যেখানে সেখানে ফেলা উচিত না। আপনি ও একই কাজটি করুন। বাসায় খাওয়ার পর বিস্কিট অথবা চিপসের প্যাকেট উঠে গিয়ে ময়লার বিনে ফেলুন। গাড়ির বাইরে, রাস্তার পাশে ময়লা না ফেলে ডাস্টবিনে ময়লা ফেলতে উৎসাহিত করুন।
➦দয়া করে, ধন্যবাদ” এবং দুঃখিত
প্রবাদ আছে, দয়া করে”, “ধন্যবাদ” এবং “দুঃখিত এই তিনটি ম্যাজিক শব্দ দিয়ে পৃথিবীর অর্ধেক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তাই সন্তানকে কোন কিছু চাওয়ার সময় দয়া করে বলতে শেখান। কোন ভুল করলে মিথ্যা না বলে, না লুকিয়ে তাকে সরাসরি সত্যি বলতে, এবং দুঃখিত বলতে বলুন।
কারো কাছ থেকে কোন সহযোগিতা বা সাপোর্ট পেলে তাকে “ধন্যবাদ” বলতে শেখান। দেখবেন আপনার বাচ্চা ক্রমেই মানবিক আর আদরণীয় হয়ে উঠছে। সবার কাছ থেকে প্রশংসা কুড়াচ্ছে।
একটি ব্যাপার আমাদের বাবা মায়েদের অবশই মনে রাখতে হবে যে, আপনার সন্তান কিন্তু তাই শিখবে শেষ পর্যন্ত যা আপনি করবেন। কাজেই নিজে যদি কোন কিছুর চর্চা না করেন দয়া করে তা সন্তানের কাছ থেকেও আশা করবেন না। কারন এতে করে হিতে বিপরীত কিছু ঘটার সম্ভাবনা কেবল বাড়বে।